,

আইনি বাধায় বন্ধ হওয়ার পথে আলোর দিশারী গণ-পাঠাগার

সলিল বরণ দাশ ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার সাড়ে ৩ লক্ষ মানুষের আলোর দিশারী নবীগঞ্জ গণপাঠাগার রক্ষার আকুতি জানিয়েছেন কবি-সাহিত্যিক, শিক্ষানুরাগী ও বইপ্রেমীরা। শিশু-কিশোরসহ সব বয়সী মানুষকে বই পড়ায় উদ্বুদ্ধ করতে ও সমাজে মুক্তবুদ্ধির চর্চার বিকাশে পাঠাগারটি গড়ে তোলা হয়েছিল। প্রায় ২৭ বছর যাবত তিলে তিলে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানটি নবীগঞ্জের সংবাদপত্র ও বইপ্রেমীদের মিলনকেন্দ্র। প্রতিদিনই ছড়া-কবিতা, উপন্যাস, শিশুতোষ ভ্রমণকাহিনি, সফল ব্যক্তিদের জীবনী, বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যসম্পর্কিত বিভিন্ন বইয়ের পাঠকের পদভারে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত মুখর থাকত পাঠাগার প্রাঙ্গণ। কিন্তু এতে ছন্দপতন ঘটেছে সম্প্রতি। কয়েক দিন ধরে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড শাখা বরাক নদের শাখা খালের মুখে পড়েছে বলে পাঠাগারটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে বলছে। পাঠাগার কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৯৫৫ সালের ভূমি জরিপে শাখা বরাকের খালের মুখ কাগজপত্রে ২৭ ফুট থাকলেও বর্তমান জরিপে আছে ১৭ ফুট। প্রশাসনের শুভঙ্করের ফাঁকিতেই পাঠাগার ভবনটি পড়েছে খালের মধ্যে। কয়েক দিন পূর্বে পানি উন্নয়ন বোর্ডে জরিপ চালিয়ে পাঠাগারের দুদিকের দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল মার্কেট ও নুরানী মার্কেট ৫ ফুট করে ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেয়। পরে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও নবীগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিস। শুধু নুরানী মাকেটের দিকে ৩/৪ ফুট ভাঙ্গা হয়েছে এবং বর্তমানে পাঠাগার সরানোতেই জোর দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর পাঠকশূন্য হয়ে পড়ছে গণপাঠাগারটি। কমছে বইপ্রেমীদের আনাগোনা। ১৯৯৪ সালে নবীগঞ্জ পৌর সদরের ওসমানী রোডের রত্না ভিলার অস্থায়ী কার্যালয়ে গণপাঠাগারটির কার্যক্রম শুরু করেন সিলেট শহরের এইডেড স্কুলের প্রধান শিক্ষক দরছ আলী। ২০০০ সালে অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম চৌধুরী, আব্দুল আহাদ, তাপস চন্দ্র আচার্যসহ স্থানীয় ১৫ শিক্ষা অনুরাগীর উদ্যোগে সদর ইউনিয়ন পরিষদসংলগ্ন জেলা প্রশাসনের মালিকানাধীন শাখা বরাক নদের পরিত্যক্ত খালের মুখে নবীগঞ্জ গণপাঠাগার ভবন উদ্বোধন করেন প্রয়াত সাংসদ দেওয়ান ফরিদ গাজী। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় এই পাঠাগারে পদচারণা ঘটে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজামান নূর, জনপ্রিয় লেখক অধ্যাপক জাফর ইকবালসহ দেশবরেণ্য অসংখ্য ব্যক্তির। ১১ সদস্যের কমিটি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে গণপাঠাগারটি। গণপাঠাগারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সভাপতি তোফাজ্জল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পাঠাগার এটি খালের মুখে হওয়ায় পানিপ্রবাহে সমস্যা নেই। ভবনের নিচ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রয়েছে। গণপাঠাগারটি বাঁচাতে স্থানীয় প্রশাসনের নমনীয় ভূমিকা আশা করেন তিনি। গণপাঠাগার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আহাদ বলেন, আমরা খুব কষ্ট করে তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহায়তায় গণপাঠাগারটি প্রতিষ্ঠা করি। খাল থেকে প্রভাবশালীদের উচ্ছেদ না করে প্রশাসন গণপাঠাগারের পেছনে লেগেছে। বহু কষ্টে গড়া পাঠাগারটি ভেঙে ফেললে আর হয়তো চালু করা সম্ভব হবে না। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, এটি যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ডের এখতিয়ার, তথাপি পাঠাগার কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন, উপজেলার একমাত্র গণপাঠাগারটি চালু রাখার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন র্বোডের নির্বাহী প্রকৌশলী এমএল সৈকত বলেন, সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পাঠাগার অন্যত্র সরিয়ে নিতে অবশ্যই সময় দেওয়া হবে। শিক্ষাবিদ তাপস চন্দ্র আচার্য্য বলেন, গণপাঠাগারের ব্যাপারে নমনীয় থাকলে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতি নবীগঞ্জের কবি-সাহিত্যক ও বইপ্রেমীরা চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।


     এই বিভাগের আরো খবর